মুর্শিদাবাদ

গ্রন্থাগার যেন হানাবাড়ি! নষ্ট হচ্ছে রাজ আমলের দুষ্প্রাপ্য পুঁথি ও বই, ক্ষোভের সুর বইপ্রেমীদের গলায়

এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে রাজ আমলে তৈরি করা হয়েছিল গ্রন্থাগার ভবন। সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল বহু মূল্যবান পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে নানান বইপত্র। অন্তহীন জ্ঞানের উৎস হল বই আর সেই বইয়ের আবাসস্থল গ্রন্থাগার বা পাঠাগার। কিন্তু বর্তমানে সেই গ্রন্থাগার রূপ নিয়েছে ভুতুড়ে বাড়িতে। ঝোপঝাড়ে ভরা লাইব্রেরীতে প্রবেশ করতে ভীতগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন বইপ্রেমীরা। দ্রুত গ্রন্থাগার সংস্কারের দাবি তুলেছেন বইপ্রেমী থেকে শুরু করে শহরবাসী।

উল্লেখ্য, চাঁচলের রাজা শরৎ চন্দ্র রায় বাহাদুর ১৯৩৭ সালে নিজের জমিদারিতে একটি লাইব্রেরির পত্তন করেন। নাম দেওয়া হয় শরৎচন্দ্র লাইব্রেরি। সেই সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বইপত্র সংগ্রহ করে তিনি লাইব্রেরিতে রাখতে শুরু করেন। বিশেষত ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষার বহু মূল্যবান বইপত্র সেই আমলে এই লাইব্রেরিতে নিয়ে আসা হয়। ১৯৫৭ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় কুমার শিবপদ রুরাল লাইব্রেরিতে। সেবছরই লাইব্রেরি সরকার অধিগ্রহণ করে। একসময় এই লাইব্রেরীতে অসংখ্য বইপ্রেমীর আনাগোনা ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে ছবিটা উল্টো। দীর্ঘদিন ধরে লাইব্রেরির মূল ফটক তালা বন্ধ। রাজার নির্মিত সাধের লাইব্রেরী রূপ নিয়েছে হানাবাড়িতে। ঝোপেঝাড়ে পরিণত হয়েছে লাইব্রেরী ভবন। নেই আলোর ব্যবস্থা। সন্ধে নামলে অন্ধকারে ঢু মেরে থাকে লাইব্রেরি চত্বর। আর এই রাতের অন্ধকারকে কাজে লাগাচ্ছেন অসামাজিক কর্মীরা, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। 
      
লাইব্রেরীটি দ্রুত সংস্কার বা সম্পূর্ণরূপে যাতে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে নেয় এই দাবি তুলেছেন এক শিক্ষিকা তথা বইপ্রেমী শ্রীপর্ণা মিত্র।
               
লাইব্রেরীর বেহাল অবস্থা নিয়ে আক্ষেপের সুর শোনা গেল বইপ্রেমী তথা আইনজীবিদের গলায়। চাঁচল আদালতের আইনজীবী সুবেশ মিত্র বলেন, এই লাইব্রেরিতে ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষার বহু দুষ্প্রাপ্য পুঁথি রয়েছে। বাইডন, শেকসপিয়ারের দুর্মূল্য লেখা যেমন রয়েছে, বেনারসের রাজার দেওয়া অ্যালবাম রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেসব নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সরকার ও প্রশাসনের এগিয়ে আসা দরকার।

১০ মাস ধরে লাইব্রেরির সমস্ত দায়িত্ব সামল দিচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী রতন সাহা। তিনি বলছেন, লাইব্রেরির অবস্থা একেবারেই বেহাল। একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হয়ে যতদূর পারা যায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু একার পক্ষে কত সামাল দেওয়া যায়! 
গোটা বিষয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়।
          
গ্রন্থাগার মন্ত্রী ও জেলাশাসকের সাথে কথা বলে দ্রুত লাইব্রেরী সংস্কারে উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বাস বাণী শুনিয়েছেন চাঁচলের বিধায়ক নীহার রঞ্জন ঘোষ।
 
চাঁচলের মহকুমাশাসক কল্লোল রায় জানাচ্ছেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবনাচিন্তা করছি। এনিয়ে আমরা জেলা গ্রন্থাগারিকের সঙ্গে কথা বলব।"

একসময় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই প্রাচীন লাইব্রেরির আয়তন নেমে এসেছে বিঘা খানেকে। লাইব্রেরির জায়গা জবরদখল করে তৈরি হয়েছে দোকানপাট। জমি দখলের চেষ্টা চলছে এখনও। শেষ পর্যন্ত প্রাচীন এই লাইব্রেরিটিই নষ্ট হয়ে যায় কিনা, তা নিয়ে এখন আশঙ্কায় চাঁচলবাসী।